রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৫ অপরাহ্ন

লোভী মানুষের সীমাহীন দুর্নীতি

লোভী মানুষের সীমাহীন দুর্নীতি

স্বদেশ ডেস্ক:

কিছু লোভী মানুষের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেশের সব সম্ভাবনা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। দুর্নীতির ফলে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা। এমন বাস্তবতায় দেশের মানুষ রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রত্যাশা করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বার্ষিক প্রতিবেদনে এই মতামত তুলে ধরে সর্বস্তরের দুর্নীতি দমনে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য দুদকের পক্ষ থেকে বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত করে কমিশন দুদকের সব ধরনের কার্যক্রম, সফলতা, ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতাগুলো রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেবে। সূত্র জানায়, আগামী ২০ মার্চ দুদক চেয়ারম্যান ও অপর দুই কমিশনার রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রতিবেদন পেশ করবেন।

জানা গেছে, প্রতিবেদনে দেশের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ছাড়াও দেশের বাইরে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থতার কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের সুপারিশ করা হচ্ছে। এতে বলা হয়, দেশ থেকে অর্থসম্পদ পাচাররোধে এবং পাচারকৃত অর্থ বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে দুদককে অগ্রণী ভূমিকায় দেখতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটিকে পর্যাপ্ত আইনি ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক ও সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম বেগবান করতে হলে দুদক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ‘ডেডিকেটেড’ জনবল নিয়োগ করতে হবে।

দুদকের খসড়া প্রতিবেদনে গত পাঁচ বছরের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজের বিষয়ে বলা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির নানা সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে তা নিরসনের সুপারিশ করা হয়। বলা হয়- এত অক্ষমতা, আইনি সীমাবদ্ধতা ও প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা নিরসন করা না হলে দেশ আরও পিছিয়ে যাবে। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে এখনই সম্ভাব্য সব ধরনের পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয় দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে। এর জন্য কোথায় প্রতিবন্ধকতা তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। সীমাবদ্ধতার বিষয়ে বলা হয়, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ তদন্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার

ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে ক্ষমতা সীমিত। সার্বিক প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ। দুদকের অরগানোগ্রামেও কোনো ডেডিকেটেড সেল নেই। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করার জন্য দুদকে তো নেই-ই, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েও ডেডিকেটেড জনবল নেই।

মানিলন্ডারিং ও আর্থিক অপরাধ উদ্ঘাটনে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথাগত পদ্ধতিতে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা হয়। এতে করে দালিলিক সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। ‘ক্রসবর্ডার’ অপরাধের ক্ষেত্রে তথ্য পেতে দুদককে কেবলমাত্র বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটের (বিএফআইইউ) ওপর নির্ভর করতে হয়।

এতে বলা হয়, যেসব দেশে বেশি পরিমাণ অর্থ পাচার হয়, সেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো দ্বিপক্ষীয় চুক্তি নেই। এমনকি ইউনাইটেড ন্যাশনস ‘অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম’-এর (ইউএনওডিসি) উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত গ্লোব নেটওয়ার্ক বা এন্টি-করাপশন এজেন্সিগুলোকে নিয়ে গঠিত অন্য কোনো আঞ্চলিক প্ল্যাটফরমে বাংলাদেশ সংযুক্ত নয়। এ কারণে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রাপ্তিতে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে অর্থ পাচার হয় এমন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি না থাকার ফলে জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআরের আওতায় তথ্যপ্রমাণ ও সম্পদ পুনরুদ্ধারে কাক্সিক্ষত ফল লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া দুদকের অভ্যন্তরীণ অক্ষমতার বিষয়ে বলা হয়, মানিলন্ডারিং ও আর্থিক অপরাধ উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট টেকনিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও দুদকে মানিলন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান-তদন্তে এর ব্যবহার নেই। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, আইনি অক্ষমতার কারণে ২০২০ সালে দুদক বিদেশ থেকে কোনো অর্থ বা সম্পদ পুনরুদ্ধার বা ফিরিয়ে আনতে পারেনি।

দেশের চলমান দুর্নীতি দমনে নতুন কী উদ্যোগ নেওয়া যায় জানতে চাইলে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান আমাদের সময়কে বলেন, দুর্নীতি দমন দুদকের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সমাজের মানুষকে পরিবর্তন হতে হবে। তিনি বলেন, হাজার কারণে দুর্নীতি হয়। আর এ দুর্নীতি হলে মানুষের কষ্ট দুর্ভোগ বাড়ে।

বার্ষিক প্রতিবেদনে কি কি সুপারিশ থাকছে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার জহুরুল হক আমাদের সময়কে বলেন, বার্ষিক প্রতিবেদনে অনেকগুলো সুপারিশ থাকবে। দেশের বিদ্যমান দুর্নীতি রোধসহ দেশ থেকে অর্থপাচার ঠেকানো জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালেও তিনি বলেছিলেন, দেশ থেকে হাজার হাজার নয়, লাখো কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। দেশ থেকে অর্থ পাচারের লাগাম টেনে ধরতে হবে। তবে এ জন্য দুদকের আইনি সীমাবদ্ধতার কথাও তিনি তুলে ধরেন।

প্রসঙ্গত, দেশ থেকে প্রতিবছর কি পরিমাণ অর্থ পাচার হয় তার একটি ধারণা পাওয়া যায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবৈধ আর্থিক প্রবাহ বা মুদ্রা পাচার নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণকারী ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জিএফআইর এক প্রতিবেদন থেকে। সংস্থাটির দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এ সংক্রান্ত তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ১৯ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে পাচার হচ্ছে। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৭০ হাজার কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে। দুর্নীতির বড় মাধ্যম হচ্ছে এই অর্থ পাচার। যা ঠেকাতে সরকার নানা সময় নিত্যনতুন আইন করলেও কোনো কাজে আসছে না। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার (বিএফআইইউ) কাছেও অর্থ পাচারের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা পাচারকারীদের তালিকা নেই। দুদকের কাছেও পূর্ণাঙ্গ আইন নেই পাচারকারীদের ধরার ক্ষেত্রে। এমনকি পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রেও। যে কারণে দুদকের ২০২০-২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে অর্থ পাচার রোধে দুদকের অক্ষমতার বিষয়টি তুলে ধরে তাতে সংস্কারের সুপারিশ করা হয়।

facebook sharing button
twitter sharing button

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877